একটু বেশিই অভিমানী সকল পর্ব
গল্পঃ-একটু বেশিই অভিমানী
পার্ট ৯
#অদ্রিতআলমাসুদ
আমি, আমার মেয়ে অধরা চলে আসলাম আমার রুমে। আমাদের সাথে সাথে শান্তা আপু ও সুমন ভাইয়াও চলে আসলো আমাদের রুমে।
—বাবাই,আমরা রাতে কোথায় খাব?(অধরা)
—বাড়িতে।(শান্তা আপু)
—না।আমি আর আমার মেয়ে এই বাড়ির ভাত খাব না।(আমি)
—তাহলে কোথায় খাবি?
—হোটেলে।
—তোকে হোটেলে খেতে হবে না।আমি রহিম কাকাকে বলে আমাদের জন্য চাল আর কিছু সবজি এনে দিতে বলছি সেইগুলো আমি রান্না করে দিচ্ছি।
—আচ্ছা।তাহলে তাই কর।
.
আপু অধরাকে কোলে করে নিয়ে গেল।আমি আর সুমন ভাইয়া কথা বলতে লাগলাম।আমি চলে যাওয়ার পর কি কি হয়েছে সুমন ভাইয়া আমাকে সবকিছু বলল।
.
এরপরে রহিম কাকা আর কাকির সাথেও অনেক কথা বলেছি।তারা আমাকে বলল আমি কোন দোষে শাস্তি পেয়েছিলাম।
.
কথা বলতে বলতে কখন যে এতোটা সময় চলে গেল বুঝতেই পারলাম না।হঠাৎ দেখলাম অধরা আমার কাছে দৌঁড়ে আসছে।আমি অধরাকে কোলে নিলাম।
.
—মামুনি তুমি দৌঁড়াচ্ছ কেন?(আমি)
—বাবাই,তোমাকে ফুপি ডাকে।(অধরা)
—কেন?
—খাবার খেতে।আমার না অনেক খিদে লাগছে চল খেতে যাই।
—আচ্ছা,চল।
.
আমি অধরাকে কোলে নিয়ে খেতে আসলাম।নিচে এসে দেখি সবাই আমার জন্য খাবার টেবিলে বসে রয়েছে।আমি টেবিলের সামনে গেলাম।
.
—নে বসে পর।আমি তোর খাবার দিচ্ছি ।(আপু)
—আমি এখানে খাব না।(আমি)
—কেন?
—এমনি।(কথাটা বলার পর খেয়াল করলাম সবার মুখের হাসিটা চলে গেল)
—সাগর,এত রাগ কিন্তুু ভাল না। (ভাবী)
—এখানে রাগের কি হল?
—তুই কি মনে করিস আমি কিছুই বুঝি না?
—তা না।
—তাহলে তুই চুপ করে এখানেই খেতে বস।
—তুমি কি মনে কর এরা আমার সাথে যা করেছে তারপরেও আমি এদের সাথে একই টেবিলে বসে খেতে পারব?
—যা হয়েছে তা ভুলে যা না। (আপু)
—তুমি আমাকে ভুলে যেতে বলছ।কিন্তুু তুমি নিজেই ত কিছু ভুলনি।
—আমি কি ভুলিনি?
—এই যে আমি এই বাড়ি থেকে যাওয়ার পর তুমি আর এই বাড়িতে আসনি।এমনকি এদের কারো সাথেই কোন কথা বলনি।
—সেইটা ত তুই চলে অভিমান করে চলে গিয়েছিলি তাই করেছিলাম।
—এখন ত আমি ফিরে এসেছি তাহলে এখন আবার আগের মতো কথা বল।
—আচ্ছা,বলব।এখন খেতে বস।
—সাগর।আমাদের কি তুই ক্ষমা করবি না?(বাবা)
—জানি না।
—তুই কি নাতনিকে আমাদের ধরতেও দিবি না?(মা)
—যে নাতনিকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে তাকে আবার ধরে কি করবে?তখন মারতে পার নেই দেখে কি এখন গলা টিপে মেরে ফেলবে? (অনেকটা রেগে গিয়ে)
—তুই এই কথাটা বলতে পারলি?(মায়ের চোখের কোণায় পানি)
—আমি কি কিছু ভুল বলেছি?তোমরা এমন কাজ করছ দেখেই আমি বলেছি।সেইদিন তোমাদের সবার পা পর্যন্ত ধরেছিলাম কিন্তুু তোমরা আমার কথা রাখনি।
—বাবাই,আমার অনেক খিদে লেগেছে।আমাকে তুমি খায়িয়ে দাও।(অধরা)
—মামুনি,একটু অপেক্ষা তারপরেই দিচ্ছি।
—আচ্ছা।
—আমাদের অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।তখন আমরা যা দেখেছি তাই বিশ্বাস করে নিয়েছি।মা হয়ে তোর সামনে হাত জোড় করছি দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে দে।(মা হাত জোড় করে কান্না করে দিয়েছি)
—বাবাই,দিদুন এতো করে বলছে যখন ক্ষমা করে দাও।
—তুমি বলছ যখন তাহলে যাও ক্ষমা করে দিলাম।
—ভাই,তুই সত্যি আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছিস?(ভাইয়া)
—হ্যাঁ।
—বাবাই,আমি তাহলে দিদুনের কোলে যাই?
—আচ্ছা,যাও।
.
তারপর মা অধরাকে কুলে নিয়ে চুমু খেল।একে একে ভাইয়া,ভাবী,বাবা সবাই মিলে অধরাকে ধরে চুমু খাচ্ছে।আমার পাকনা বুড়িটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে আজকে অনেক খুশি।যেই মিশু অধরাকে কুলে নিতে যাবে তখনই আমি অধরাকে আমার কোলে নিয়ে আসলাম।
.
—আস মামুনি আমি তোমাকে খায়িয়ে দেই।(আমি)
—আজকে আমি দিদুনের হাতে খাব।(অধরা)
.
মা অধরাকে খায়িয়ে দিতে লাগল।মিশু মার পাশে দাঁড়িয়ে খাওয়ানো দেখছে আর কাঁদছে। (আমার কি তবে মিশুকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ না কখনই না মিশুকে আমি এতো তাড়াতাড়ি কখনই ক্ষমা করব না)
কিছু সময় পর মিশু নিজের হাতে কিছু ভাত নিয়ে অধরার মুখের কাছে ধরল।
.
—আপনি ওকে খায়িয়ে দিবেন না।(আমি)
—কেন?(মিশু)
—কে জানে আপনি হয়ত নিজের হাতে বিষ মিশিয়ে এনে ভাতের সাথে মিশিয়ে আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলবেন।
—তুমি বিশ্বাস কর আমি আমার মেয়েকে মারব না।কখনই মারবনা। মা হয়ে নিজের মেয়েকে কিভাবে মারব আমি(কান্না করে)
—বিশ্বাস?তাও আবার আপনাকে?হাসালেন।কেনো আপনার মনে নেই কিভাবে মারবেন, না মারার সুযোগ করে দিতে হবে।।।
—নিশ্চুপ….
—আপনাকে বিশ্বাস করে বিয়ে করে বাড়িতে এনে এক বছর না শেষ হতেই আমি আপনি আমার পরিবারের মানুষকে আমার কাছে থেকে আলাদা করে দিয়েছেন।এখন যদি আবার বিশ্বাস করি হয়ত আমার মেয়েকেই আমার কাছে থেকে আলাদা করে দিবেন।
—তুমি বিশ্বাস কর আমি এইসব ইচ্ছে করে করিনি। (আমার পা ধরে কান্না করে)
—যে স্ত্রীর তার স্বামীর ওপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস থাকেনা সে কেমন স্ত্রী হুমম? বিয়ের ছয়মাসে আপনার কি মনে হয়েছে আমি আপনাকে কখনো ঠকিয়েছি বা ঠকানোর চেষ্টা করেছি।পা ছাড়ুন আমার (পা ছাড়িয়ে)
আমি শেষবারের মতো বলে দিচ্ছি আমার আর আমার মেয়ের কাছে থেকে দূরে থাকবেন।আপনার জন্য যদি আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমি আপনাকে জীবনেও ছাড়ব না আর মা অধরার খাওয়া শেষ হলে অধরাকে আমার ঘরে দিয়ে যেও।
—আচ্ছা।
.
কথাটা বলেই আমি সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম।আমি আমার রুমে এসেছি প্রায় অনেক সময় হয়ে আসল।ঐদিকে অধরার খাওয়া শেষ হওয়ার পর মিশু অধরার সাথে খেলা করতে লাগল।
.
আরও কিছু সময় পর মিশু অধরাকে কোলে নিয়ে আমার ঘরে এসে দিয়ে গেল।আমার আর ঝগড়া করতে মন চাইল না।তাই মিশুকে আর কিছু বললাম না।
.
তারপর অধরাকে আমার বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালে আমি ঘুম থেকে একটু পরে উঠলাম।আমি উঠার অনেক আগেই মিশু অধরাকে আমার কাছে থেকে নিয়ে গেছে।
.
তারপর আমি উঠে ফ্রেস হয়ে আমার রুম থেকে বের হতেই যা দেখলাম তাতে আমার মাথার রক্ত গরম হয়ে গেল।আমি জানতাম অধরা যদি মিশুর সাথে থাকে তাহলে ওর কোন না কোন ক্ষতি হবেই হবে।
.
#দৌড়বে….