কিশোরী বউ সকল পর্ব
কিশোরী বউ (সিজন ০২)
writer – কাব্য আহমেদ
#part_4
- তিথি, এতে তো তোমার পড়াশুনোয় কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আমরা জাষ্ট প্লানিং করছি। (আমি)
- আহা! বিরক্ত করবে নাতো। দেখছো তো পড়ছি। তারপরও বিরক্ত করছো।(তিথি)
বিরক্ত নিয়ে বলল তিথি।
আমি তিথির দিকে তাকিয়ে রইলাম। বুঝতে পারছি না কি বলব? তিথি এমন করছে কেনো? একটু আগেই তো সব স্বাভাবিক ছিলো। তাহলে এখন কি হয়ে গেলো তিথির। তিথির কোনো দিকে মনযোগ নেই। পড়া করছে মন দিয়ে। সত্যি আমার বিরক্ত করাটা বোধ হয় ঠিক হয়নি। বিছানা থেকে উঠে বারান্ধায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুকের বাম পাশটায় কেমন জানি চিন চিনে ব্যাথা হচ্ছে।
সব কিছু তো ঠিক ছিল তাহলে হঠাৎ করেই সবটা এভাবে অগোছালো হয়ে গেলো কেনো?
( তিথি)
উফ! এতো পড়া। পড়তে পড়তেই পাগল হয়ে যাবো দেখছি। আমার বোধ হয় আর সংসার করাই হবে না। আর বাচ্চাকাচ্চাও পালন করা হবে না।
ভাবতে ভাবতেই তিথির মনে পড়ল কাব্যের কথা। একটু আগে কি বলেছিলো কাব্য। ইয়েস, বাবুর কথা বলেছিল। কিন্তু, আমি কি বললাম? দূর মনেই পড়ছে না। এতো পড়াশোনা। এসব মনে রাখা যায় নাকি?
হ্যা, এইতো মনে পড়ছে।
কাব্য আমাকে বাবু কন্সিভ করার কথা বললে। আমি কাব্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।
দূর! কি করলাম এটা? আমি নিজেই তো একদিন কাব্যের কাছে বাবু চাইছিলাম তাহলে…।
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল নাহ বিছানায় নেই। উঁকিঝুঁকি মেরে বারান্ধার দিকে তাকিয়ে দেখল কাব্য দাঁড়িয়ে আছে বারান্ধায়।
খুব খারাপ লাগল তিথির। কাব্য বোধ হয় কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু…
তিথি উঠে বারান্ধার দিকে এগিয়ে গেলো। - তুমি এখাবে দাঁড়িয়ে আছো যে? ঘুমাবে না?
তিথির কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালাম, - ওও, হ্যা।
বলেই তিথিকে পাশ কাটিয়ে রুমে ডুকলাম। তিথি কিছু বলতে চাইছিল বলতে পারল না। মনে খারাপ করে তাকাল আমার দিকে। - তোমার পড়া শেষ হলে শুয়ে পড়ো?
বলে আমি শুয়ে পড়লাম একদিকে।
( তিথি)
আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। আমার বরটা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু, আমিই বা কি করব? এতো পড়াশোনা। মাঝে মাঝে কি যে করি? নিজেই বুঝিনা।
ধ্যাত, কষ্ট দিয়ে ফেললাম নিজের অজান্তে। যেহেতু কষ্ট আমি দিয়েছি। সেহেতু, কষ্টটা আমাকেই ভুলাতে হবে।
খাটে উঠলাম।
সাহেব অন্যদিকে তাকিয়ে শুয়ে আছেন চোখ বন্ধ করে। বেশ বুঝতে পারছি উনি ঘুমুননি। - আমি ভাবছি কি? একটা বেবি কেনো নিবো টুইন বেবিই নিই?
বলে মুচকি হাসল তিথি।
আমি তিথির কথা শুনে বড়সড় শক খেলাম। কিন্তু, চোখ খুললাম না। ঘুমিয়ে আছি এমন ভান করলাম।
( তিথি)
আচ্ছা, এখন ঘুমের এক্টিং করা হচ্ছে। দেখাচ্ছি মজা। কাছে ঘেসে শুয়ে পড়লাম। আলতো করে জরিয়ে ধরলাম। নিঃশ্বাস ঘাড়ে ফেলতে লাগলাম, - আমি জানি। তুমি ঘুমওনি এখনো।
আমি কোনো কথা বললাম না। - প্লিজ, তাকাও না আমার দিকে।
কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল তিথি। আমি বুঝতে পারছি তিথি এখন কেঁদেই ফেলবে। তাই মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম। তিথি আমার উপর ভর দিয়ে আমার উপর দিয়ে আমার সামনে চলে আসল। জরিয়ে ধরে বলল, - সরি।
আমি না জানার ভান করে বললাম, - কেনো?
- আহা! বুঝে না আমার বাবুটা।
বলে নাক টিপে ধরল। - না, বললে বুঝব কি করে?
- সত্যি, বুঝতে পারছো না। আমি কেনো তোমাকে সরি বলেছি?
কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল। - না তো।
- আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি না জেনেই তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।
আমি কোনো কথা বললাম না। তিথি আমাকে জরিয়ে ধরল। আমার বুকে মাথা রাখল, - প্লিজ, ক্ষমা করে দাও।
- কি জন্য ক্ষমা চাচ্ছো সেটাতো বলো।
বিরক্তি নিয়ে বললাম।
তিথি এখন কেঁদেই ফেলল। - আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা কষ্ট পাবে। তুমি এতোটা কষ্ট পাবে জানলে তখন বেবি কন্সিভ করার কথায় তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম না।
- তুমি না চাইলে নাই।
- মানে!
- মানে! তুমি কন্সিভ করতে না চাইলে কন্সিভ করবে না। আমিও কোনো জোরজবরদস্তি করব না তোমার সাথে।
অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম।
তিথি এবার জোরে জোরে কেঁদে দিলো, - প্লিজ, এভাবে বলো না।
আমি কোনো কথা বললাম না। - সত্যিই যদি আমি মারা যাই তাহলে তোমার কি হবে? ( তিথি)
কান্না করতে করতে
হঠাৎ করেই কথাটা বলল তিথি।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকালাম তিথির দিকে, - কি সব আজেবাজে বকছো?
- আমি তখন তোমাকে কন্সিভ করতে মানা করেছিলাম কেনো জানো?
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালাম তিথির দিকে, - কেনো?
প্রশ্ন করলাম। - অনেকেতো বেবি হওয়ার সময় মারা যায়। আমিও যদি আমার বেবি হওয়ার সময় মারা যাই। তখন…
ফুফারে ফুফাতে বলল।
তিথির কথাত যেনো আমার বুকটা কেপে উঠল।
আমি জোরে জরিয়ে ধরলাম তিথিকে, - চুপ, একদম মেরে ফেলবো বললাম।
ভাঙাভাঙা গলায় বললাম। - বাচ্চা কন্সিভ করতে সবসময় স্বামীরাই বউকে মানা করে। বউ মারা যাওয়ার ভয়ে। কিন্তু, আমি মানা করেছি কেনো জানো? কারন যদি আমার কিছু হয়ে যায় তখন তোমার কি হবে? তোমাকে দেখবে কে? আমার মৃত্যুর প্রথম কয়েকমাস তো তুমি কষ্ট পাবেই। আর তোমার কষ্ট হওয়া দেখে দেখে আমিও কষ্ট পাবো।
আর তোমার কষ্টের সময় আমি তোমার পাশে থাকলাম না। তাহলে আমার কিসের ভালোবাসা ? আমি তোমার বউইইবা কেনো? এটাতেই ভয় পাই আমি।
তিথি কাঁদতে কাঁদতে বলল কথাগুলো। গলাধরে আসছিল কথাগুলো বলতে গিয়ে।
আমিও কান্না করে দিলাম। শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম তিথিকে। সত্যি এগুলো আমার ভাবার কথা ছিল আর ভাবছে তিথি।
তিথি কাঁদতে কাঁদতে আমার বুক ভাসিয়ে দিচ্ছে। - আমার বউটা এতো বড় হয়ে গেছে। আমিতো টেরই পেলাম না।
- তোমার বউ এখন অনেক বড় হয়ে গেছে বুঝলে। কয়েকদিন পরতো বুড়িই হয়ে যাবো।
কান্নার মধ্যেও হেসে দিলো। দৃশ্যটা অপরুপ। আমি তাকিয়ে রইলাম অপলক।
সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে আমার পিচ্ছি বউটা। অনেক্ষণ বুকে শুয়ে রইল তিথি। তিথি নিশ্চুপ শুয়ে আছে। আমি তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, - তিথি।
- হুম।
- এখনো জেগে আছো। ঘুমুবে না?
- ঘুমুলেতো আমার বুড়ো বরের আদর অনুভব করতে পারব না।
- পাগলি…
হেসে দিলাম। - আপনিও? (তিথি)
- কি?
- পাগল।
,
( তিথি)
যাক আমার বরটা এখন আর কষ্ট পাচ্ছে না। কি যে করি না মাঝে মাঝে? এসব বলে দিয়েছি কাব্যকে। এখন তো পড়লাম ঝামেলায়। এখনতো কাব্য আমার বাবুই নিতে দিবে না।
আমিও না। কিচ্ছু মুখে আঠকায় না। ধ্যাত। - আচ্ছা, এখন আমাকে আদর করুন।
মুখ তুলে বলল তিথি।
এই মেয়েটার কাণ্ডকারখানায় মাঝে মাঝে অবাকই হই। হঠাৎ, করেই আদর চাই তার। পাগলি…
একটু আগে কতো ইমোশনাল কথাই না বলল। সেগুলোই হজম করে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আর উনি এখন আদর চাচ্ছেন। - কি হলো?
- কি?
- আদর করছেন না কেনো?
মাথা উঁচু করে আমার ঠোঁটে চুমু একে দিলো। - যদি, তুমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাও।
- কাব্যওওও।
চোখ রাঙিয়ে বলল তিথি। - আরে বাবা, আমি তো সিয়াসলি বললাম।
- জানি না ওসব। হলে হবো।
- কিন্তু, আমি হতে দিবো না।
- কাব্যওও, এখন মাইর দিবো কিন্তু…
- আহা! আমার পিচ্ছি বউ আমাকে মাইর দিবে। দআও দাও।
- লাগবে তোমার আদর। আমি নিজেই পারি…
বলেই আমাকে ঠেলে চিৎ করে শুইয়ে দিলো। আমার বুকের উপর উঠে বসল, - এই তুমি আমাকে ঘোড়া পাইছ। যখন তখন বুকে উঠে পড়ো।
- হ্যা, পাইছি। আর ঘোড়ার বুকে উঠে না মানুষ। পিঠে উঠে…
বলে আমার ঠোঁটে ঠোঁট গুজে দিলো তিথি। আমি হারিয়ে গেলাম তিথিতে। হোক না আজ রাত তিথিময়।
আলতো পরশ একে দিলাম তিথি চুলে। তিথিকে বুক থেকে নামিয়ে দিলাম। হাত দুটো চেপে ধরলাম। তাকিয়ে রইলাম তিথির কাপা চোখ আর কেপে কেপে উঠা ঠোঁটের দিকে। তিথি চোখ বন্ধ করে আছে। আমি তাকিয়েই রইলাম। তিথিও চোখ খুলল। আমি তাকিয়ে রইলাম আর তিথিও।
মুখ গুঁজে দিলাম তিথির ঘাড়ে। তিথি প্রচন্ড ভাবে কেপে উঠল। আমার মাথায় আকড়ে ধরল। নখ বসিয়ে দিছে।
ঘাড়ে চুমু একে দিলাম। তিথি আরো শক্ত করে আমার মাথার পিছনে ঘাড়ে ধরল। আমি তিথি লম্বা কেশে মুখ ডুবিয়ে দিলাম।
নেশা করি না কখনো। কিন্তু, এখন মনে হচ্ছে প্রতিদিনই নেশায় পড়তে হবে আমাকে। কি অদ্ভুত! নেশা ধরানো ঘ্রান। মাতাল হয়ে যাচ্ছি। হারিয়ে ফেলছি নিজেকে। - আরেকটা কিস করো না ঘাড়ে।
আমার কানে আস্তে করে বলল তিথি। আমি হেসে দিলাম। এই মেয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে দিবে দেখছি।
ঘাড়ে নাক দিতেই আরো আকড়ে ধরল তিথি। দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল।
হাত দিয়ে পেটে স্লাইড করতেই তিথি কেপে কেপে উঠল।
আমার হাত চেপে ধরল ওর হাত দিয়ে। - আমি সত্যিই একদিন মরে যাবো তোমার ভালোবাসায়। সেই কবেই খুন হয়ে গেছি তোমার ভালোবাসায়।
কাঁপতে কাঁপতে বলল তিথি। - খুন তো তুমি করেছো আমায়। তোমার হাত তো খুন হতে বারবার জন্ম নিতে পারি আমি।
,
অগোছালো হয়ে শুয়ে আছে আমার বুজে তিথি। চুলগুলো এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আমি চুলগুলো হাতাচ্ছি।
ঠিক হাতাচ্ছি না স্লাইড করছি। - তিথি…
তিথি কোনো কথা বলল না। নিরব… - তিথিইই…
- উহুউউ, উহুউউ
ঘুম ঘুম কন্ঠে কেঁদে উঠল। - কি হলো?
- প্লিজ, জ্বালিয়ো না আর। আমার অতিরিক্ত ঘুম পাচ্ছে।
আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল। - কিন্তু, আমার তো তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে।
- আমি পারবো না।
- কি?
- প্লিজ, ঘুমুতে দাও। প্লিজ…
- ওকে, ওকে..
হাসতে হাসতে বললাম। কিছুক্ষণ পর আবার, - তিথি,
- উফফ!তোর মাথা ফাটিয়ে দিবো আজ।
- ওকে, ওকে বাবা। আর জ্বালাচ্ছি না তোমাকে।
হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি আমি। তিথিকে জ্বালাতে ভালো লাগছে। ঘুম ঘুম চোখে তিথি যখন বিরক্ত হয় না অসম্ভব সুন্দর লাগে তখন তিথিকে। - চুলে হাত বুলানো বন্ধ করে দিলে কেনো?
আমার ভাবনার ঘোর কাটল তিথির স্বর শুনে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলছে তিথি। - ওহ, সরি।
তিথি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম পরম যত্নে। ঘুমাক আমার পিচ্ছি বউটা। আর আমি সেই দৃশ্য অবলোকন করি। ক্ষতি কি তাতে?
চলবে……