সিহাব লাইব্রেরিতে বসে পড়ছিলো।এমন
সময় রাইসা পিছন থেকে এসে ওর ঘাড়ে
চিমটি দিলো।তখন সিহাব চিৎকার করে উঠে
বলল:
—-ইস! এই শাঁকচুন্নি চিমটি মারলি কেন?
(সিহাব)
—-আমাকে ফেলে রেখে চলে আসলি কেন?
(রাইসা)
—-তোর আসতে দেরি হচ্ছিলো তাই চলে
আসছি,এতে আমার দোষ কি?(সিহাব)
—-আর একদিন যদি আমায় একা ফেলে চলে
এসেছিস তো তোর খবর আছে।(রাইসা)
—-আচ্ছা ঠিক আছে আর তোকে ছাড়া
আসবো না(সিহাব)
—-হু এখন একটু চেপে বস আমিও একটু বসি
এখানে(রাইসা)
সিহাব ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
রাইসাও তাই।ওদের পরিচয় ফার্স্ট ইয়ার
থেকে।দুইজন দুইজনকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে
পারে না।কলেজ শেষে সিহাব বাসায়
যাচ্ছিলো এমন সময় রাইসা ডাকলো:
—-কি রে একা একা বাসায় যাচ্ছিস কেন?
(রাইসা)
[ads2]
—-আজ রিহান আসে নি তো তাই।(সিহাব)
—-ও আচ্ছা ঠিক আছে চল আজ দুইজস একসাথে
যাই(রাইসা)
—-হুম চল(,সিহাব)
হেঁটে যেতে যেতে সিহাব রাইসাকে বলল:
—-রাইসা তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?
(সিহাব)
—-হঠাৎ এ প্রশ্ন করলি কেন?(রাইসা)
—-না এমনি(সিহাব)
—-ও।(রাইসা)
দুইজনে আর কথা বললো না।রাইসার বাড়ি
এসে গেলো।রাইসাকে ওর বাড়ি পর্যন্ত
ছেড়ে দিয়ে সিহাব যেতে লাগলো তখন
রাইসা আবার ডাকলো:
—-সিহাব কাল কি তুই ফ্রি থাকবি?(রাইসা)
—-আমি তো সবসময়ই ফ্রি থাকি(সিহাব)
—-আচ্ছা কাল সকাল ১০ টায় আমার বাড়ির
সামনে আসিস তো এক জায়গায় যাবো।
(রাইসা)
—-কোথায় যাবি(সিহাব)
—-কালকে আসিস আগে তারপর জানবি
(রাইসা)
—-আচ্ছা(সিহাব)
বিকেলবেলা সিহাব আর ওর বন্ধু ওদের
পাড়ার মাঠে বসে আছে।ঠিক তখন রিহান
বলল:
—-তোকে আর রাইসা ভাবিকে কিন্তু দারুন
মানিয়েছে(রিহান)
—-ধুর কি বলিস এসব,আর রাইসাকে ভাবি
বলছিস কেন ও তোর কোন ভাইয়ের বউ(সিহাব)
—-ঠিক কথায় তো বলছি।রাইসা তোর বউ।আর
আমি জানি তুই ওকে খুব ভালোবাসিস।
(সিহাব)
—-বিয়েই করলাম না আর বউ হলো।আর তুই
জানলি কিভাবে যে আমি রাইসাকে
ভালোবাসি
?(সিহাব)
—-ছোট বেলা থেকে আমরা একসাথে বড়
হয়েছি আর তোর মনের কথা জানবো না এটা
কোন কথা হলো।(রিহান)
—-তুই ঠিক বলেছিস দোস্ত আমি রাইসাকে খুব
খুব ভালোবেসে ফেলেছি রে।(সিহাব)
—-যত তাড়াতাড়ি পারিস ভালোবাসি
কথাটি বলে দে নইলে পাখি ফুরুৎ করে উড়াল
দিয়ে চলে যাবে।(রিহান)
—-সামনে ১০ মে ওর জন্মদিন আর সেদিনই
বলবো ভাবছি।(সিহাব)
—-Best of luck দোস্ত(রিহান)
পরেরদিন সকালে সিহাব রাইসার বাড়ির
ওখানে গেলো।একটু বাদেই রাইসা বের হয়ে
এলো।প্রতিদিনের চেয়ে রাইসাকে আজ একটু
বেশি সুন্দর লাগছে।সিহাব রাইসার দিকে
তাকিয়ে আছে তখন রাইসা ওকে বলল:
—-ওই এভাবে আমার দিকে তাকাস না
প্রেমে পরে যাবি কিন্তু(বলে হেসে
উঠলো রাইসা)
—-আমি তো সেই কবেই তোর প্রেমে পড়ে
গেছি(আস্তে আস্তে বলল সিহাব)
—-কিছু বললি?(রাইসা)
—-আরে না কিছু বলি নি তো।(সিহাব)
—-একটা রিকশা ডাক দে তুই(রাইসা)
সিহাব একটা রিকশা ডাকলো।তারপর দুইজনে
মিলে সেই রিকশায় বসলো।বাতাসে
রাইসার চুলগুলো উড়ে এসে সিহাবের মুখে
পড়ছিলো।ভালোই লাগলো।রাইসাকে
সিহাব বলল:
—-কোথায় যাবি এখন? (সিহাব)
—-নদীর পাড়ে।(রাইসা)
—-ওখানে গিয়ে কি করবি(সিহাব)
—-বসে থাকবো তাছাড়া আর কি করবো
(রাইসা)
দুইজনে নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে আছে।এমন সময়
রাইসা বলল:
—-আচ্ছা সিহাব তুই কি কাউকে
ভালোবাসিস?(রাইসা)
—-হুম বাসি তো।(সিহাব)
—-বাহ ভালো তো কে সেই মেয়েটা
(রাইসা)
—-আছে একজন তবে তাকে এখনো বলতে
পারি নি।খুব ভয় হয় যদি ও ফিরিয়ে দেয়।ওকে
নিয়ে প্রতিদিন কত স্বপ্ন দেখি যেগুলো
কখনো বাস্তব হবে কিনা জানি না(
সিহাব)
[ads1]
—-মন থেকে যদি ভালোবেসে থাকিস
তাহলে একদিন ঠিক ওকে পেয়ে যাবি।চল
এবার দুইজনে ফুচকা খাই(রাইসা)
—-ঠিক আছে চল(সিহাব)
সেদিন আরো বেশকিছু সময় ওখানে কাটিয়ে
বাড়ি চলে আসলো।কিছুদিন বাদে
সিহাবের গ্রামের বাড়ি থেকে খবর আসলো
ওর দাদা খুব অসুস্থ। তাই সেখানে ওর পরিবার
সহ চলে গেলো।
কিন্তু ওর দাদা মারা যাওয়ার কারনে প্রায়
১৪দিন পর ওখান থেকে বাসায় আসলো
সিহাব।
বাড়ি এসে রাইসাকে বেশকয়েকবার ফোন
দিলো কিন্তু বন্ধ দেখালো।ভাবলো
যোগাযোগ না করায় মেয়েটা হয়তো রাগ
করছে।
পরেরদিন কলেজে গেলো।আজ আকাশটা
কালো মেঘে ছেয়ে আছে।না জানি কখন
বৃষ্টি হয়।কলেজের বাইরে রাইসার জন্য
অপেক্ষা করছে কিন্তু ওর আসার কোন খবর নেই।
এমন সময় রিহানের সাথে ওর দেখা।রিহান
সিহাবকে দেখামাত্র বলল:
—-কি রে কই ছিলি এ কয়দিন(রিহান)
—-এই তো গ্রামে বাসায় গিয়ে
ছিলাম,দাদা মারা গেছে তাই ওখান
থেকে আসতে এতোদিন সময় লাগলো(সিহাব)
—-ও।আমি বাসায় গিয়েছিলাম তোর কিন্তু
তোকে কোথাও পেলাম না(রিহান)
—-আচ্ছা রাইসা কোথায় রে?(সিহাব)
রিহানের মুখটা শুকিয়ে গেলো।তাই দেখে
আবার সিহাব বলল:
—-কি রে কথা বলছিস না কেন?(সিহাব)
—-দোস্ত তোর রাইসার বিয়ে হয়ে গেছে
(রিহান)
—-মজা করিস আমার সাথে তাই না?
(সিহাব)
—-মজা না দোস্ত সিরিয়াসলি বলছি ওর
বিয়ে হয়ে গেছে সাতদিন হলো(রিহান)
—-এটা কিভাবে সম্ভব দোস্ত,এটা হতে
পারে না তুই ঠিক বলছিস তো(সিহাব)
—-হ্যা দোস্ত ওর বিয়েতে আমাদের ইনভাইট
করেছিলো।ওর ফুফুর ছেলের সাথে হঠাৎ করে
ওর বিয়ে ঠিক হয়ে যায় আর সেদিন বিয়ে
করে নিয়ে চলে যায়।তোকে যেতে
বলেছিলো কিন্তু তুই কষ্ট পাবি ভেবে এটা
তোকে বলিনি(রিহান)
—-ওর তো এমন করার কথা ছিলো না,এতো
তাড়াতাড়ি ও কেন এমন করলো(কান্নাজড়িত
কন্ঠে বলল সিহাব)
—-ভেঙ্গে পরিস না দোস্ত শক্ত হতে হবে
তোর এখন(রিহান)
—-আমি রাইসাকে ছাড়া কিভাবে
থাকবো বল(সিহাব)
—-তোকে আমি কি বলে শান্তনা দিবো
বুঝতে পারছি না।কিন্তু দোস্ত মন খারাপ
করিস না রে ওর সাথে তোর হয়তো ভাগ্য
লেখা নেই তাই ওকে পাসনি(রিহান)
রিহান সাথে আর কথা বললো না সিহাব।
রাস্তা দিয়ে ও হাঁটছে।পা যেন চলতে
চাইছে না,বুকের ভিতর কেমন একটা চিন চিন
ব্যাথা অনু্ভব করছে।এতোদিন রাইসাকে
নিয়ে মিথ্যা স্বপ্ন দেখেছিলো যেগুলো
নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।এসব ভাবছিলো
আর চোখমুছছিলো।আজকের পর থেকে কেউ আর
ওকে বিরক্ত করবে না,কেউ আর বলবে না যে
আমাকে একা রেখে চলে এলি কেন?এসব
ভাবতে ওর খুব খারাপ লাগছে।চোখটা খুব
ঝাপসা হয়ে আসছে।এমন সময় জোরে বৃষ্টি
এলো।হয়তো বৃষ্টির কারনে আর কেউ দেখতে
পারবে না ওর চোখের জল।
(সমাপ্ত)
গল্পঃ-মিথ্যা_স্বপ্ন