…গল্পঃ হঠাৎ পরিবর্তনের ভালবাসা…..
ভার্সিটি থেকে এসে নিজ রুমে
ঢুকেই
অবাক হয়ে যাই। একি! আমার রুমটা
এতো
সুন্দর করে সাজালো কে? মা তো
এমনিতেই
অসুস্থ।
– মা, রুমটা কি তুমি সাজিয়েছো?
মাঃ না বাবা আমি না।
– তবে কে?
:- আমি।
অর্থির দিকে তাকিয়ে বললাম
– হঠাৎ করে এমন করার কারণ?
:- তোমার রুমে এসে দেখি। পুরো রুমটা
এলোমেলো। তাই করে দিলাম। আর
যেন
এলোমেলো না হয় কেমন?
আকাশ হতে পড়লাম। অর্থি আমার
বাল্যকালের বন্ধু। সেই ছোট থেকে এক
সাথে বড় হয়েছি। যদিও অর্থি আমার
তিন
ব্যাচ ছোট। তবুও বাল্যকালের ফ্রেন্ড
হওয়ায়
আমাদের সম্পর্কটা তুই করে। কিন্তু আজ
হঠাৎ করে অর্থি তুমি করে বলায় আমার
মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
তেমন
কিছু না বলে সোজা নিজ রুমে চলে
গেলাম।
বিকালে ছাদে বসে গিটার বাজাই।
পুরাতন
অভ্যাস। অর্থিও প্রতিদিন ছাদে আসে।
তবে আজ এসে আমার পাশে বসে
পড়লো।
:- এই একটা সুন্দর করে গান গাও।
এবার সুযোগ পেলাম তাই বললাম
– তোর সমস্যা কি?
:- কিসের সমস্যা?
– হঠাৎ তুমি তুমি করছিস কেন?
অর্থি মুচকি হেসে বললো
:- আমার ইচ্ছে তাই। তোমার সমস্যা
কি?
– এমন হলে আমার সাথে আর কথা বলবি
না।
উঠে চলে আসলাম।
সন্ধ্যার আগেই ঘরে চলে আসায় মা
জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে? আজ এত
তাড়াতাড়ি আসলি কেন?
আমি মায়ের সাথে খুব ফ্রি। তাই
বললাম
– আর বলিও না তো। আজ সকাল থেকে
অর্থি শুধু তুমি তুমি করছে। এখন ছাদে
বসেও
তুমি তুমি করছিলো তাই চলে আসলাম।
মা মুচকি হেসে বললো আচ্ছা যা
ফ্রেশ
হয়ে নে।
মায়ের হাসিটায় রহস্য ছিলো। তবুও
কিছু
জিজ্ঞেস না করে চলে এলাম।
বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে।
একটি
মেয়েও আছে। আমার বয়সীই।
মেয়েটাও
ছাদে আসে। ছাদে এসেই পরিচয় হয়।
মেয়েটার গিটারের শব্দ খুব ভালো
লাগে।
পাশে চেয়ার নিয়ে বসে গিটার
শুনছে।
তখনই অর্থি চলে এল। এসে আমার পাশে
বসলো। কিছুক্ষণ গিটার বাজানোর পর
অর্থি বললো
:- ওহ বলতে ভুলে গেছি। তোমাকে মা
ডাকছে।
[ads1]
আবার তুমি? রাগে করে উঠে চলে
এসেছি।
তবে আসার সময় নতুন মেয়েটিকে বাই
বলে
এসেছি। ঘরে এসে মাকে বললাম
– হ্যাঁ মা বলো কেন ডেকেছো?
মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো কই
আমি
তো ডাকিনি। মেজাজ পুরাই গরম হয়ে
গেল।
পিছনে ফিরেই দেখি অর্থি। রাগ
নিয়ে
বললাম
– এই তুই মিথ্যা বললি কেন?
অর্থি দিগুন রেগে বললো
:- তো কি করতাম? তুমি ঐ মেয়েটার
দিকে
বারবার ওভাবে তাকিয়ে ছিলে
কেন?
মায়ের সামনে কথাটি বলায়
অর্থিকে কিছু
বলতে পারলাম না। সোজা রুমে এসে
ভাবতে লাগলাম হঠাৎ অর্থি এমন করছে
কেন?
ভার্সিটিতে আজ শেষ দিন। তাই সবাই
মিলে পার্টি করছি। বিশেষ করে
আমরা
যারা এখনো সিঙ্গেল থেকে গেছি
তারা।
আমাদের মাঝে একটি মেয়েও আছে।
নাম
পল্লবী। আমার খুব ঘনিষ্ঠ। দুবার
প্রপোজও
করেছিলাম।তবে একসেপ্ট করেনি।
কিন্তু
বন্ধুত্ব ভাঙ্গেনি। যখন ওর আরো ঘনিষ্ঠ
হলাম তখন বুঝলাম ওর মতো বন্ধু হয় না।
তাই
ওকে নিয়ে ভালবাসা স্বপ্নগুলো
হাওয়া
হয়ে গেল। পার্টি শেষে ভার্সিটি
থেকে
যাবার সময় সবাই আবেগ প্রবণ হয়ে
উঠলাম।
একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর
বাসায়
চলে এলাম। খুব টায়ার্ড লাগছে তাই ঘুম
দিলাম। বিকালে ছাদেও যাইনি।
কিছুক্ষণ
পর একজনের অনুপস্থিতি টের পেলাম।
অর্থির। আজকে ওকে একবারও
দেখিনি।
তাই মাকে জিজ্ঞেস করলাম
– মা, অর্থি আজ আসলো না কেন?
মা বললো, তাতে তোর কি? ও না
আসলেই
তো তোর জন্য ভালো। তোকে কেউ
জ্বালাবে না।
মায়ের এমন উত্তরে কিছুটা বিস্মিত
হলাম।
ওকে খুব মিস করছি। আসলে দুষ্টামি
মানুষ
গুলো হঠাৎ দুষ্টামি বন্ধ করে দিলে এক
ধরণের শূণ্যতা অনুভব হয়।
পরে অর্থির বাসায় গেলাম। কিন্তু ও রুম
আটকিয়ে রেখেছে। কিছুক্ষণ পর
ফিরে চলে
আসলাম।
রাতে খাবারের সময় মা বললো, তুই কি
ভার্সিটির কোনো মেয়েকে
ভালবাসিস?
আমি বিস্মিত হয়েই বললাম
– আরে না। কি যে বলো।
আব্বু বললো, তাহলে ভার্সিটির
গেইটের
সামনে যে মেয়েটাকে জড়িয়ে
ধরলি ওটা
কে?
এবার তো টাসকি খেলাম। আমি
বললাম
– ও যাস্ট গুড ফ্রেন্ড। কিন্তু তোমরা
জানলে কিভাবে?
আব্বু বললো, অর্থি দেখেছে।
মনে মনে বললাম পেচি মেয়ে।
তখন মা বললো, দেখ আমরা অর্থির
সাথে
তোর বিয়ে ঠিক করেছি। এই কথা তুই
বাদে
সবাই জানে। তুই কি রাজি?
আমি কিছু বলার আগেই আব্বু বললো‚ ও
রাজি, না রাজি দিয়ে কি হবে?
আমি
যেটা ঠিক করেছি সেটাই হবে।
তারপর আর
তেমন কথা হয়নি। ঘুমাতে যেয়ে
অর্থির
কথা ভাবতে লাগলাম। এতদিন ওর আচরণ
পরিবর্তনের কারণটা আজ বুঝতে
পারলাম।
ভার্সিটিতে ওভাবে দেখে হয়তো
সন্দেহ
[ads2]
করেছে। সকালে উঠে সব ঠিক করতে
হবে।
সকালে উঠে ওর বাসায় গেলাম।
আন্টি
তজেকে জানলাম অর্থি ছাদে আছে।
ছাদে
গেলাম। যেয়ে দেখলাম বাতাসে ওর
চুল
গুলো উড়ছে। এতদিন এই সৌন্দর্য
খেয়ালই
করিনি। কথায় আছে না, হীরা পাশে
থাকলে মানুষ বুঝতে পারে না। আমিও
তেমন এতদিন এই পরীটাকে লক্ষ্যই
করিনি।
আমার উপস্থিতি টের পেয়ে অর্থি
বললো
:- এখানে এসেছিস কেন?
– আসলে তোর মুখ থেকে তুই শব্দটাই
বেশি
মানায়। কিন্তু বিয়ের পরও কি তুই করে
বলবি?
:- হুহ বয়েই গেল তোকে বিয়ে করতে?
– আরে বাবা ভার্সিটিতে যা
দেখেছিস
সেটা ভুল। ও আমার যাস্ট ফ্রেন্ড।
:- যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিস তাতে
তো
মনে হয় তোর বউ।
– মেয়েরা আসলেই বেশি বুঝে।
:- সত্য বললেই গায়ে লাগে।
– আচ্ছা ঠিকাছে। স্যরি। আর কখনোই
কাউকে জড়িয়ে ধরবো না।
:- আমাকেও না?
আমি তখনই ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
তোকে
ছাড়া আর কাউকে না।
:- আমাদের বাবুনিকেও না?
– আরে বাহ এতো দ্রুত এতো সব
প্লানিং
করে রেখেছিস?
> এই চুপ। আর আজ থেকে তুই করে বলবে
না।
তুমি করে বলবে।
– জ্বি হুকুম। সন্দেহের রাজকুমারী।
অর্থি দুটা কিল মেরে আমার বুকেই
পড়ে
রইলো। এই প্রথম ওর প্রতি মায়া
ভালবাসা
জন্মালো। তাই আমিও জড়িয়ে ধরে..