গল্পঃ- একটু বেশিই অভিমানী 💖
পার্ট ১(প্রারম্ভ)
#অদ্রিতআলমাসুদ
একটু বেশিই অভিমানী সকল পর্ব
—সাগর।(অফিসের বস)
—হ্যাঁ,স্যার বলেন।(আমি)
—শুনলাম দুই মাস ধরে তুমি তোমার বেতন নিচ্ছ না।কিন্তুু কেন?
—আসলে স্যার আমার এখন টাকার দরকার নাই।যখন দরকার হবে তখন নিয়ে দিব।
—তোমার বউয়ের সন্তান হবে আর তুমি বলচ্ছ তোমার টাকার দরকার নাই।এইটা কেমন কথা?
—আসলে স্যার আমার বউয়ের সব খরচ আমার বাবাই চালাচ্ছে তাই আমি টাকা গুলি নিচ্ছি না।
—অহ।তা তোমার বউয়ের বাচ্চা হবে কবে?
—ডাক্তার বলেছে সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে।
—অহ।এখন তুমি তোমার কাজ কর।
—আচ্ছা।
.
আপনারাও হয়ত ভাবচ্ছেন আমার বউয়ের বাচ্চা হবে আর আমি তার পিছনে একটা টাকাও কেন ব্যয় করচ্ছি না।এর উওর আস্তে আস্তে পাবেন।
.
এখন আগে পরিচয় দিয়ে নেই।আমার নাম সাগর আর আমার বউয়ের নাম মিশু।আমি আমাদের পরিবারের ছোট ছেলে।আমার আগে একটা বড় বোন আর বড় ভাই আছে’
.
ছোট ছিলাম বলে সব সময় সবার ভালবাসা আর আদর পেয়েছি।কিন্তুু আমার বিয়ে হওয়ার পর আমার জীবনটাই পাল্টে গিয়েছে।
.
কিভাবে?সেইটা নাহয় পরে একদিন বলব।আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ির দিকে রনা দিয়ে দিয়েছি।
.
কিছু সময় পর বাড়িতেও এসে পরেছি।বাড়িতে আসতে আসতে রাত ১২ টা বেজে গেল।অবশ্য বাড়ির কেউ আমার মুখ দেখতে চায় না।
.
তাই আমি সবার ঘুম আসার পরে বাড়িতে আসি আর সবাই ঘুম থেকে উঠার আগেই বাড়ি থেকে চলে যাই।আমি বাড়িতে এসে বেল বাজালাম।আমাদের বাড়ির কাজের মহিলা দরজা খুলে দিল।সে আমাদের বাড়িতে আমি জন্মের আগে থেকেই আছে।
.
—সাগর,খাবার খাবে না?(কাজের মহিলা)
—না।বাড়ির সবাই কি ঘুমিয়ে পরেছে?(আমি)
—হ্যাঁ।একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল?
—কি কথা?
—এমন করে আর কতদিন চলবে?আগের মতো কি আবার আপনারা এক হয়ে থাকতে পারেন না?আমার এইসব দেখতে ভাল লাগে না।
—হ্যাঁ,কাকি।সব আবার আগের মতোই হবে।
—কবে?
—আমার সন্তান জন্মের পর।এখন আমি শুয়ে গেলাম।আপনিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন
—আচ্ছা।
.
সেখান থেকে আমি মিশুর কাছে গেলাম।কারণ আমার সন্তানকে দেখতে অনেক ইচ্ছে করচ্ছিল।কিছু সময় মিশুর পাশে থেকে সেখান থেকে চলে আসলাম।
.
অন্য একটি রুমে এসে শুয়ে পরলাম।কারণ মিশুর সাথে শুয়ার অনুমতি আমার নাই।আমি রুমে এসে শুয়ে পরলাম।সকালে সবাই উঠার আগেই আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।
.
—কাকি।(মিশু)
—হ্যাঁ,মা বল।(কাকি)
—সাগর কি আজকেও চলে গেছে?
—হ্যাঁ।
—সাগর কি সকালে কিছু খেয়েছে?(মা)
—না।
—কালকে রাতে খেয়েছিল?(বাবা)
—না।
—কেন যে সাগরকে এতদিন এতকিছু বলেছিলাম।যদি এতদিন সাগরকে ভুল না বুঝতাম তাহলে এত কিছু হতোই না।(ভাইয়া)
—তোরা ত জানিস সাগর ছোট থেকেই একটু বেশি অভিমানী।একবার যদি কারো উপর ওর অভিমান হয়।তাহলে সারাজীবনেও কারো সেই মানুষটির সাথে কথা বলে না।
—হ্যাঁ,জানি।
—ওর এই অভিমানের জন্য আজকে পর্যন্ত ঐ ওর কত কাছের বন্ধুদের সাথে এখনও কথা বলে না।
—বন্ধু আর পরিবারের মানুষ কি এক হলো?
—ওর কাছে হয়ত এক।তার উপর সেইদিন তোর বাবা ওকে এতকিছু বলেছে আর গালে থাপ্পরও মেরেছে।তাই হয়ত একটু বেশি অভিমান হয়েছে।
—আমি যেমন বলেছি তুমিও তেমনি বলেছ।
—সব হয়েছে আমার জন্য।আমি যদি আপনাদের এসে সাগরের নামে ঐসব কথাগুলো না বলতাম তাহলে এইসব কিছুই হতো না।(মিশু)
—তোমার কোন দোষ নাই।সাগর যেমন করেছে তুমি ত আমাদের সেইগুলোই বলেছ।
—তাও আমার জন্য আপনারা আপনাদের ছেলের কাছে থেকে দূর হয়ে গিয়েছেন।
—না না।এতে তোমার কোন দোষ নাই।
.
তারপর সবাই যার যার কাজে চলে গেল।দেখতে দেখতে আমার সন্তানের জন্মের দিনও চলে আসল।
.
সেইদিন আমি অফিসে বসে বসে কাজ করছিলাম।হঠাৎ করেই বাবা আমাকে ফোন দিল।বাবার উপর অভিমান থাকার কারণে আমি ফোন ধরলাম না।
.
বাবা আরও কয়েকবার ফোন দিল কিন্তুু আমি ধরি নি।কিছু সময় পর মাও ফোন দিল।দুই-তিনবার মা ফোন দেওয়ার পর অবশেষে ধরলাম।
.
—কিরে ফোন ধরছিলি না কেন?(মা)
—কাজ করছিলাম।(আমি)
—তাড়াতাড়ি কমফোর্ট হাসপাতালে চলে আয়।
—কেন?
—মিশুর পেটে অনেক ব্যাথা হচ্ছিল তাই মিশুকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।তুই ও তাড়াতাড়ি চলে আস।মনে হয় একটু পরেই মিশু সন্তানের জন্ম দিবে।
—আচ্ছা।আসছি।
.
আমি তাড়াতাড়ি অফিসের বস মানে আমার ম্যামের কাছে গিয়ে ছুটি নিয়ে চলে আসলাম।আমি হাসপাতালে এসে দেখতে পেলাম মিশুকে ওটিতে নিয়ে গিয়েছে।
.
কিছু সময় পর ডাক্তার বের হয়ে বলল আমার সুন্দর একটা মেয়ে হয়েছে।মিশুকে রুমে সিফট করার পর আমি তাড়াতাড়ি আমার মেয়ের কাছে গেলাম।
.
আমি আমার মেয়ের কাছে গিয়ে তাকে কোলে নিলাম।আমি আমার মেয়েকে দেখে ত অবাক।কারণ আমার মেয়ে অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে।
.
দেখতে ঠিক একদম পরীর মতো।আমি ত আমার মেয়ের দিকে থেকে চোখ ফেরাতেই পারচ্ছি না।একটু পর একে একে মা-বাবা,ভাই-ভাবী সবাই রুমে আসল।মিশুরও জ্ঞান ফিরে এসেছে।
.
—আমার মেয়েকে একটু দাও।কেমন হয়েছে একটু দেখি।(মিশু)
—না।(আমি)
—কেন?
—তুমি ওকে কোলে নিলে ত তুমিও ওর মতো চরিএহীনা হয়ে যাবে।
—একটু আগে যে মেয়ে জন্ম নিল সে চরিএহীনা হলো কি করে?(মা)
—কি যে বল মা।ওর শরীরে ত আমার রক্ত বয়ছে আর আমি ত তোমাদের সবার কাছে চরিএহীন।তাহলে আমার মেয়েও ত চরিএহীনা হলো তাই না?
—তাই বলে কি তুই আমাদের নাতনিকে আমাদের কাছে দিবি না? (বাবা)
—না।
—ভাই এত রাগ করিস না।যা হওয়ার হয়ে গেছে।মেয়েটাকে একটু আমাদের কাছে দে।(ভাইয়া)
—না দিব না।
—তুমি কি ওকে সারাজীবন একাই লালন পালন করবে নাকি?(ভাবী)
—দরকার হলে একাই ।
—তুমি এমন করো না।আমার মেয়েটাকে আমার কাছে দাও।(মিশু)
—মেয়ে?কিসের মেয়ে?কে তোমার মেয়ে?
—কেন তোমার কোলে যে সেই ত আমার মেয়ে।
—ও তোমার মেয়ে না।ও শুধু আমার একার মেয়ে।
—কেন?
—কেন মানে?তোমার মনে নেই ও জন্মের আগেই তুমি ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে?ওকে মারার জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলে?ডাক্তার যখন অ্যাবরশন করাল না তখন তুমি ফাঁসি দিতে গিয়েছিলে।যাতে করে আমার এই মেয়েটি পৃথিবীর আলো না দেখতে পারে।মনে নেই তোমার?
—এইসব হয়েছে আজ থেকে চার মাস আগে।আমি ত এইসব ভুলেও গিয়েছি।
—তুমি ভুলে গেলেও আমি কিছুই ভুলি নাই।
—তাই বলে কি তুমি আমাকে আমার মেয়ের মুখটাও দেখতে দিবে না?(কান্না করে)
—না।
—মা-বাবা,দেখেন না আপনার ছেলে আমার মেয়ের মুখটাও আমাকে দেখতে দিচ্ছে না।
—সাগর,দেখ মিশু কেমন করে কান্না করচ্ছে।ওর কাছে একটু মেয়েটাকে দে।
—একবার বললাম ত দিব না।
—ওকে নাহয় না দিলে আমাদের ত মেয়েটির মুখ দেখতে দে।(ভাইয়া)
—তোমাদেরও দিব না।
—কেন?
—কেন মনে নেই?আরহী যখন আমার মেয়েটিকে অ্যাবরশন করাতে যেতে চেয়েছিল তখন তোমরা সবাই মিলে ওর সাথে ছিলে।তোমরাও চাইছিলে না যাতে আমার মেয়ে এই পৃথিবীর আলো দেখতে পায়।
—তাই বলে কি আমাদের নাতনিকে কখনই আমাদের কাছে আসতে দিবি না?
—আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের কাছে ওকে আমি কখনই আসতে দিব না।তাছাড়া তোমাদের কাছে ত আমি মৃত।সেইদিন বাবা না আমাকে শেষ কাজ করতে চেয়েছিল?আমি যখন তোমাদের কাছে মৃত তাহলে তোমরা আমার মেয়েকে দেখে কি করবে?আমার মতো আমার মেয়েও ত তোমাদের কাছে মৃত।
—আমি ত সেইদিন রাগের মাথায় বলেছিলাম।(বাবা)
—রাগের মাথায়ই মানুষ সব সময় সত্য কথা বলে বাবা।
—তাহলে তুই এখন কি করতে চাস?
—এমন কিছু করব যাতে তোমাদের ইচ্ছে পূরণ করতে পারি।
—মানে?
—তোমরা চেয়েছিলে যাতে আমি তোমাদের সামনে কখনই না আসি।আমি এখন এমন কিছু করব যাতে আমার আর আমার মেয়ের মুখ তোমাদের আর কখনই না দেখতে হয়।
—কি করবি তুই?
—সময় হলেই দেখতে পাবে।
—কাকি।(কাজের মহিলাকে ডাক দিলাম)
—হ্যাঁ,বাবা।বলো।
—আমি এখন একটু বাহিরে যাব।তুমি একটু আমার মেয়েকে দেখবে?
—আচ্ছা।দাও আমার কাছে।
—একটা জিনিস খেয়াল রাখবে।
—কি?
—যাতে আমার মেয়েকে কেউ না দেখে আর ধরে।
—আচ্ছা।
.
আমি কাকির কাছে আমার মেয়েকে রেখে অফিসের দিকে রওনা দিলাম।আমি সব আগের থেকেই ভেবে রেখেছি আমাকে কি করতে হবে।
.
সেই অনুযায়ী আমি কাজ করতে লাগলাম।কিছু সময় পরেই অফিসে চলে আসলাম।অফিসে এসে সরাসরি ম্যামের কাছে চলে গেলাম।
.
#চলবে কি??